সরকারি নির্দেশে দোকানপাট খুলে দেয়ায় ময়মনসিংহের বিভিন্ন মার্কেটে ও ফুটপাতে ঈদের কেনাকাটা করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। কোথাও নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই। মুখে মাস্ক পড়লেও তীব্র গরমে অনেকে মাস্ক মুখের নিচে ঝুলিয়ে রাখছেন। সামাজিক দূরত্ব একেবারেই উপেক্ষিত।
বুধবার দুপুরে নগরীর ব্যস্ততম এলাকা স্টেশন রোডের পালিকা মার্কেট, গাঙ্গিনারপাড়ের বারী প্লাজা,আক্তার ম্যানসন, সরকার ম্যানসন, হকার্স মার্কেট, নতুন বাজার এলাকার মফিজুদ্দিন ইনডেক্স প্লাজা ও চরপাড়ার মার্কেটগুলোতে এমন চিত্র দেখা যায়। এ ছাড়া স্টেশন রোড ও গাঙ্গিনাড়পাড়ের ফুটপাতে ঈদের কেনাকাটায় ক্রেতারা ভিড় করছেন।
মার্কেটের বিক্রেতারা বলছেন অনেকদিন পর ক্রেতারা মার্কেটে কেনাকাটা করতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। আর ক্রেতারা বলছেন ঈদের আগ মুহুর্তে মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। তাই আগে থেকেই ঈদের কেনাকাটায় নেমে পড়েছেন তারা।
নগরীর আকুয়া মোড়লবাড়ী এলাকার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম। তিনি শহরের একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি করোনাকালীন সময় থেকে স্বাস্থ্যবিধির সকল নিয়ম মেনে চলাফেরা করেন। তবে স্ত্রীর ইচ্ছায় মার্কেটে এসে রীতিমতো অবাক হয়েছেন এই সচেতন মানুষটি।
বারী প্লাজার দ্বিতীয় তলা থেকে কেনাকাটা করে নামার পর কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, পরিবারের সবাই বলছে কিছুদিন পর মার্কেটে ঈদের কেনাকাটায় প্রচণ্ড ভিড় হবে। এসে দেখি ভিড় শুরু হয়ে গেছে। আমরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে আসছি, মাস্ক পড়ে এসেছি। এই তীব্র গরমেও কেউ মাস্ক খুলিনি। তবে অনেক ক্রেতাকে দেখেছি মাস্ক থুতনির নিচে ঝুলিয়ে রাখছে কিংবা মাস্ক নেই। মার্কেটে হাত ধোয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই।
সরকার ম্যানসনে মেয়েদের জামাকাপড় বিক্রি করেন আবু জাফর খান। তিনি বলেন, ‘লকডাউনে মার্কেট বন্ধ থাকায় আমাদের চরম ক্ষতি হয়েছে। লকডাউনে দোকান আর কয়েকদিন বন্ধ থাকলে আমাদের পথে বসতে হতো। দোকান বন্ধ থাকলেও ভাড়া ঠিকই দিতে হয়। দোকান খোলা রাখার সুযোগ দেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।’
মার্কেটে প্রবেশের পথে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি মার্কেটের মালিক বুঝবে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মার্কেটে আসলে আমাদেরও ভয় করে। তবুও জীবনের তাগিদে ঝুঁকি নিয়েই বিক্রি করছি।’
গাঙ্গিনারপাড়ের ফুটপাতে জুতা, বেল্ট ও ছোট টি শার্ট বিক্রি করছিলেন আলমগীর নামে এক যুবক। তিনি বলেন, ‘কয়ডা দিন কঠিন লকডাউনে জীবনডা ত্যানা ত্যানা হইয়া গেছিল। কি খায়া বাচবাম চিন্তায় পড়ছিলাম। কারণ হারাদিন যা বেছি তা দিয়াই চাল কিনয়্যা খাই। পেটে খুদার জ্বালা মিটানো আগে দরকার। আর তাই সকাল থাইক্যা রাত পর্যন্ত দাঁড়াইয়্যা এইগুলো বিক্রি করতাছি।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে লকডাউনের সময়সীমা আগামী ৫ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। দোকানপাট ও শপিংমল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখা যাবে।
‘আমরা বার বার বলছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেচাকেনা করার জন্য। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলা উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে মাস্ক দেয়া হচ্ছে। এরপরও কেউ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে জরিমানা করা হচ্ছে। করোনার বিস্তার রোধে এখন থেকেই সকলকে সর্বোচ্চ সচেতনতার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে ২৯ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সদর ও সিটি করপোরেশনে ১৬ জন, ভালুকায় ৯ জন ও ফুলবাড়িয়ায় ৪ জন। এ পর্যন্ত জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৬৬৮ জন, আইসোলেশনে আছেন ৪২৬ জন। এ ছাড়া আজকে নতুন করে একজনসহ ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে।